Thursday, October 19, 2017

অন্তরে তুমি আছ চির দিন

অন্তরে তুমি আছ চির দিন ওগো অন্তর্যামী
বাহিরে বৃথাই যত খুজি তা-ই
পাই না তোমায় আমি।।

প্রানের মতন আত্মার সম
আমাতে আছ হে অন্তরতম
মন্দির রচি বিগ্রহ পুজি দেখে হাস তুমি স্বামী।।

সমীরন সম আলোর মতন বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
গন্ধ কুসুম সৌরভ সম
প্রানে প্রানে আছো জড়ায়ে

তুমি বহুরুপী  তুমি রূপহীন
তব লীলা হেরি অন্ত বিহীন
তব লুকোচুরি খেলা সহচরী
আমি যে বিদস জামি।।

ভুলি কেমনে আজো যে মনে


ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা সনে রহিল আঁকা
আজো সজনী দিন রজনী সে বিনে গনি সকলি ফাঁকা।।

আগে মন করলে চুরি মর্মে শেষে হানলে ‍ছুরি
এত শঠতা এত যে ব্যাথা তবু যেন তা মধুতে মাখা।।

চকোরী দেখলে চাদে দুর হতে সই আজো কাঁদে
আজো বাদলে, ঝুলন ঝোলে তোমনি জলে চলে বলাকা।।

বকুলের তলায় দোদুল কাজলা মেয়ে কুড়োয় লো ফুল
চলে নাগরী কাখে গাগরী চরণ ভারি কোমর বাঁকা।।

ডালে তোর করলে আঘাত দিস্ রে কবি ফুল সওগাত
ব্যাথা মুকুলে অলি না ছুলে বনে কি দুলে, ফুল পতাকা।।

অরুন রাঙ্গা গোলাপ-কলি


অরুন রাঙ্গা গোলাপ-কলি
কে নিবি সহেলী আয়
গালে যার গোলাপি আভা
এ ফুল কলি তারে চায়।।

ডালির ফুল যে শুকায়ে যায়
কোথায় লায়লী শিরি কোথায়
কোথায় প্রেমিক বিরহী মজনু
এ ফুল দেব কাহার পায়।।

পূর্ন চাদের এমন তিথি
ফুল বিলাসী কই অতিথি
বুলবুলি বিনে এ গুলযে
অভিমানে মুরছায়।।

সেদিন বলেছিলেসেই সে ফুলবনে

সেদিন ব'লেছিলে এই সে ফুলবনে
আবার হবে দেখা ফাগুনে তব সনে।।

ফাগুন এলো ফিরে লাগে না মন কাজে,
আমার হিয়া ভরি, উদাসী বেণু বাজে;
শুধাই তব কথা দখিনা সমীরণে।।
শপথ ভুলিয়াছ বন্ধু, ভুলিলে পথ কি গো
বারেক দিয়ে দেখা লুকালে মায়ামৃগ।
আঁচলে ফুল লয়ে হল' না মালা গাঁথা,
আসার পথ তব ঢাকিল ঝরা পাতা;
পূজার চন্দন শুকালো অঙ্গনে।।
সেদিন ব'লেছিলে এই সে ফুলবনে
তাল : দাদ্‌রা
কথা : কাজী নজরুল ইসলাম
সুর : শৈলেশ দত্তগুপ্ত

দুর দ্বীপ-বাসিনী


দুর দ্বীপ-বাসিনী, চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনির দেশে তুমি বিদেশিনী গো,
সুমন্দ ভাষিনী।।

প্রশান্ত সাগরে – তুফানে ও ঝড়ে
শুনেছি তোমারি অশান্ত রাগিনী।।

বাজাও কি বুনো সুর পাহাড়ি বাঁশিতে
বনান্ত ছেয়ে যায় বাসন্তি হাসিতে
তব কবরী-মূলে নব এলাচির ফুল
দুলে কুসুম-বিলাসীনি।।

জাগো সাকি হাম দরদী

জাগো সাকি হাম দরদী জাম বাটিতে দাও শারাব
চুলোয় যাক এই দুঃখ ব্যাথা ধুলোয় ঢাকুক সব অভাব।।
 
ভর পেয়ালা দাস্তে দে দোস্ত মাস্ত হয়ে বুদ সেই নেশায়
দি ফেলে এই শির হতে  ওই সুনীল আকাশ গাঠরিটায়।।
 
ভয় কি সখি করবে নিন্দা শাস্ত্র শকুন বন্ধুরা
বদনামে মোর পরোয়া থোড়াই চালাও পানসী দাও সুরা।
 
সব অজানা জানার মাঝে দিল দরদী ফিরনু ভাই
দুনিয়া ঘুরে দেখনু ঢুড়ে দিল দরদী বন্ধু নাই।।
 
 গুলবাগে আর দেবদারুকে দেখতে কারুর রয় না সাধ,
দেখলে প্রিয়ার সরল ছাঁদ আর চাঁদনি-সফেদ বদন-চাঁদ!
 
দিবানিশি পাস যে ব্যথা, ওরে হাফিজ, দু-দিন থাম!
আসবে প্রিয়া দিল্-জানিয়া, পূর্ণ হবে মনস্কাম!

আবার ভালবাসার সাধ জাগে

আবার ভালবাসার সাধ জাগে
সেই পুরাতন চাঁদ
আমার চোখে আজ নুতন লাগে।।

যে ফুল দলিয়াছি নিঠুর পায়ে
সাধ যায় ধরি তারে বক্ষে জড়ায়ে
উদাসীন হিয়া হায় রেঙ্গে ওঠে অবেলায়
সোনার গোধুলি রাগে।।

আবার ফাগুন সমীর কেন বহে
আমার ভুবন ভরি কেঁদে ওঠে বাঁশরী
অসীম বিরহে।

তপোবনের বুকে ঝর্নার সম
কে এলে সহসা হে প্রিয়তম
মাথুরের গোকুল সহসা রাঙ্গাইলে
রাসের কুঙ্কুম ফাগে।।

মোরে ডেকে লও সেই দেশে

মোরে ডেকে লও সেই দেশে প্রিয় যে দেশে তুমি থাক।
মোর কি কাজ জীবনে বঁধূ যদি তুমি কাছে নাহি ডাক।।

        এই পৃথিবীর হাসি গান
বঁধূ সব হয়ে যায় ম্লান,
মধু-মাধবী রাসের তিথি হায় ! মাধব এলে নাকো।।

এত আত্মীয় প্রিয়জন মোর কিছু নাহি ভাল লাগে,
ভীড় রহে না প্রেমের নীড়ে সেথা দুটি পাখি শুধু জাগে।
ফুল তুলিয়া পূজার তরে
কেন ফেলে রাখ হেলা ভরে
তার মরণের আগে বঁধূ শুধু বারেক চরণে রাখ।।